বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকায় বসে বিভিন্ন রকমের ফলের বাজার। মধুপুর বিখ্যাত আনারস এর জন্য, রাজশাহী আমের জন্য, তেমনি বরিশাল বিখ্যাত পেয়ারা বাজার এর জন্য। ধারণা করা হয় বরিশাল, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি এই তিন জেলায় এশিয়ার বৃহত্তম পেয়ারার চাষ হয়। মনোমুগ্ধকর বিস্তীর্ন এই পেয়ারার বাগান দেখতে যে কেউ আসতে পারেন বরিশালে।
ছুটি মানেই আনন্দ ছুটি মানেই খুশির জোয়ার। আর এই আনন্দ এবং খুশির মাতোয়ারা তখনই পরিপূর্ণটা লাভ করবে যখন পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে দূরে কোথাও গিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন।
প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্য, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ব্যবসা বানিজ্য সব কিছুর জন্যই সমৃদ্ধ বিশ্বের বৃহত্তম দেশ রাশিয়ায়। দিগন্তের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়ালেও দেখে শেষ করা যাবেনা রূপের আধার রাশিয়ার লীলাভূমি
রূপকথার গল্পের কোন এক রাজকুমারী বিচরণ করছে, এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে, তার সৌন্দর্য দিয়ে আগত সকলকে মোহবিষ্ট করছে। সেই রাজকুমারীর হলো নাম জাফলং। তার মোহে আবিষ্ট হয়ে প্রতিদিন দেশ বিদেশ থেকে শত শত পর্যটক উপস্থিত হচ্ছে জৈন্তা পাহাড়েরর পাদদেশে অবস্থিত জাফলং এ
We have two son. Ethan Bilrak is elder and Evan Rasong is younger brothe of Ethan Bilrak. During pandemic time while every where Covid 19 disease increasing all over the world. On that time our elder son Ethan Bilrak born. Dated: 02/05/202 in Cumilla.
And our second son Evan Rasong born in 05/04/2023. Both son bord at the same Hospital.
আপনার বর্তমান মোবাইল ফোন সেটটি বিটিআরসির নিবন্ধিত কিনা তা খুব সহজে জেনে নিন। সরকার ঘোষণা দিয়েছেন অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন খুব শীঘ্র বন্ধ করার ব্যবস্থা নিবে।
কিভাবে জানবেনঃ
#আপনার মোবাইলের ডায়াল অপশনে গিয়ে *#16161# করলেই একটি অপশন চলে আসবে। সেখানে বলা হবে input 15 digit IMEI, অর্থাৎ ১৫ সংখ্যার আইএমইআই লিখে সেন্ড করলেই ফিরতি মেসেজে মোবাইল ফোনের বৈধতা সম্পর্কে জানিয়ে দিবে।
# মোবাইল ফোন সেট এর আইএমইআই (IMEI) নম্বর জানা না থাকলে মোবাইলের ডায়াল অপশনে গিয়ে *#06# ডায়াল করলেই আইএমইআই নম্বরটি পাওয়া যাবে।
এছাড়া মোবাইল ফোন সেটের বক্সে এবং মোবাইল সেটের পিছনেও স্টিকারে IMEI নম্বরটি লেখা থাকে।
ভার্সিটি জীবনের প্রথম দিনের ক্লাশ শেষ করে বাসার দিকে রওনা দিবো তখন মনে হলো একবার বুলিটিন বোর্ডটা দেখেই যাই, যদি কোন জুরুরী নোটিশ থাকে। একা দাঁড়িয়ে চোখ বুলাচ্ছি এমন সময় হঠাৎ একটা মেয়ে খট্ খট্ শব্দে আমার দিকে এগিয়ে এলো। খুব দ্রুত এসে আমার পেছনে দাঁড়ালো এবং ওভাবেই সেও বোর্ড দেখছিলো। যেহেতু সে আমার ঠিক পেছনে ছিলো তাই তার প্রতিটি নিঃশ্বাসের উষ্ণ বাতাস আমার ঘার এবং ডান কান আলতো ভাবে স্পর্শ করছিলো। আমি একবার পিছন ফিরে তার দিকে তাকিয়ে একটু সরে দাঁড়ালাম। তারপর সে বোর্ডের আরও কাছে চোখ নিয়ে কি যেন দেখে আগের ভঙ্গিমায় খট্ খট্ শব্দ করে গেটের বাইরে চলে গেল। আমিও ধীর পায়ে বাইরে চলে আসি এবং হাটতে হাটতে বাসের টিকিট কাউন্টারে চলে আসলাম। টিকিট কেটে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি এমন সময় হঠাৎ দেখলাম সেই মেয়েটি আরো দু’জন বান্ধবী নিয়ে কথা বলতে বলতে আমার পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে। সে সময় আমার বাসটিও চলে আসে। বাসের উঠার পর জানালা দিয়ে আমি আবার তাদের দেখতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু ততক্ষণে তারা ব্যস্তময় শহরে হাজার মানুষের ভীড়ে হারিয়ে গেছে। বাসায় ফিরে খাওয়ার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে প্রতিদিনের ন্যায় ছাত্র পড়াতে চলে গেলাম।
রাতের আকাশটা আজ কেমন যেন ভিন্ন রকম মনে হচ্ছে। চাঁদ নেই তবে তারার মেলা আছে। যতদূর দৃষ্টি যায় ততদূর দেখতে চেষ্টা করলাম। রাস্তায় এখনও দু’একটা গাড়ি রাতের ফাঁকা রাস্তা পেয়ে খুব দ্রুত বেগে ছুটে যাচ্ছে। আমাদের বাসার প্রায় সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। মনে হয় আমি একাই জেগে আছি। অন্য দিন হলে আমিও ঘুমিয়ে পড়তাম। কারণ রাত জাগার অভ্যাস আমার নেই। কিন্তু আজ কেন যেন আমার চোখে ঘুম একদমই আসছেনা। তাই দক্ষিণের খোলা জানালা দিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য অবলোকন করছিলাম। হঠাৎ আমার চোখ পাশের ফ্ল্যাটের জানালার দিকে গেল। তাকিয়ে দেখে অবাক হলাম! একটা ষোড়শী সুন্দরী মেয়ে জানালার গ্রীল ধরে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমার চোখ তার চোখে পড়তেই সে লজ্জায় লাল হয়ে সেখান থেকে সরে গেল। তার লজ্জামাখা মুখশ্রীটা দেখে আমি মনে মনে হাসলাম। এর আগে তাকে কখনও দেখিনি। হয়তো এখানে তারা নতুন এসেছে। তাকে দেখার পর আমার চোখে ভাসতে লাগলো সেই মেয়ের মুখছবি। অবশেষে মেয়েটির কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম খেয়াল নেই।
পরদিন সকালে দেরি করে ঘুম ভাঙ্গলো আমার, তখন ঘড়িতে সাতটা বাজে। নাস্তা করেই ভার্সিটির দিকে ছুটে গেলাম। ভার্সিটিতে পৌঁছার দশ মিনিট পর ক্লাশের ঘন্টা বাজলো। ক্লাশে বসে আছি এমন সময় হঠাৎ একটি মেয়ে আমার পাশে এসে বসলো। তারপর কয়েক মিনিটের মধ্যেই একজন ম্যাডাম ক্লাশে ঢুকলো। ম্যাডাম বয়স্ক হলেও উনাকে দেখে ত্রিশ পঁয়ত্রিশ এর মতো লাগছিলো। ইংলিশ কবি লর্ড বায়রনের লেখা কবিতা “ She walks in Beauty" এর মহিলার মতো তারকা খচিত শাড়ী পড়ে আসছিলো। সেই সাথে অন্যান্য সাজ তো ছিলোই। উনার প্রথম ক্লাশ তাই সেদিন ম্যাডাম শুধু উপদেশ বাণী শুনালেন। তিনি বললেন, “তোমাদের জন্য আমার উপদেশ হলো- যখন তোমরা কোন কাজ করতে যাবে তখন আগেই চিন্তা করে নিবে কাজটা তোমার এবং অন্যের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে কিনা। তেমনি কাউকে কিছু বলতে গেলে আগেই ভেবে নিবে তোমার বাক্যবানে কারোর কোন ক্ষতি, কষ্ট বা দুঃখ পাচ্ছে কিনা। সৃষ্টিকর্তা আমাদের এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন কারোর বিনাশ করতে নয় বরং অপরের মঙ্গল সাধন করতে ও সবাইকে নিজের মতো করে ভালোবাসতে। মনে রেখো- আত্নসংযম ও বিশুদ্ধতাই জীবনের পূর্ণ আনন্দ আনে। যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে আনন্দ থাকেনা এবং যেখানে আত্নসংযম নেই সেখানে বিশুদ্ধাতার কথা চিন্তাই করা যায়না।” প্রথম ক্লাশেই ম্যাডামের প্রতিটা বাক্য হৃদয়ে গেথে রেখেছিলাম।
সেদিন ক্লাশেই আমি মেয়েটিকে খুব ভালো করে দেখে নিয়েছিলাম। দেখে মনে হচ্ছে সাধারণ মেয়ে নয় সে। ভাবসাব দেখে বুঝা যায় বাবার কিছু আছে। এভাবে বেশ কয়েকদিন কেটে গেলো। কিন্তু তার সাথে চোখাচোখি হলেও কথা হয়নি একবারও। একদিন টিফিন পিরিয়ডে লাইব্রেরীতে বসে বই পড়ছিলাম। তখন ছোট একটি কাশির শব্দে আমার মনোযোগ স্থিতিমিত হলো। তাকিয়ে দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না। কিছুক্ষণ মনে হয় স্তব্ধ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমার মন ও দৃষ্টির ঘোর ভেঙ্গে দিয়ে মেয়েটি বললো-
-আমি কি এখানে বসতে পারি?
তারপর সে আমার সাথে বসে অনেক্ষণ গল্প করেছিলো। এভাবে প্রতিদিন আমাদের দেখা সাক্ষাৎ ও কথাবার্তা চললো। এভাবে ধীরে ধীরে আমাদের মাঝে বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে উঠে যা শেষ পর্যন্ত ভালোবাসায় রূপ নেয়। একাধারে সে আমার খুব ভালো বন্ধু, প্রেমিকা এবং সহপাঠি। আমাদের বন্ধুত্ব এবং পড়াশুনা দুটোই খুব ভালোভাবে চলছিলো। কিন্তু একদিন লক্ষ্য করলাম সে ক্লাশে আসেনি। কোনদিন কোন অসুবিধা হলে সে আমাকে জানাত; কিন্তু সেদিন সে ফোন পর্যন্তও করেনি। আমি নিজে তাকে অনেকবার কল করেও পাইনি। আমি এতক্ষণ যার কথা বলছি তার নাম এখনো বলাই হলো না। হ্যাঁ বলছি- তার নাম মেঘলা। সেই মেঘলা পরদিনও যখন আসলো না তখন আমার অনেক চিন্তা হলো। কে যেন আমার কানে বার বার বলছিলো তোমার মেঘলা বিপদে আছে। এভাবে এক সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম মেঘলা যদি আমার সাথে প্রতারণা করে তবুও আমি তার সাথে শেষ দেখা ও কথা বলে আসবো।
শ্রাবণের অপরাহ্ন! নীলাকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেছে। কিছুক্ষণ পরেই হয়তো বৃষ্টি নামবে। বৃষ্টির আগেই আমি মেঘলার বাসায় গিয়ে পৌঁছালাম। পৌঁছেই শুনতে পেলাম মেঘলা সাতদিন যাবত অসুস্থ এবং আজকে তাকে বাসায় আনা হয়েছে। তারপর ধীর পায়ে আমি মেঘলার রুমে গিয়ে ঢুকলাম। আমাকে দেখে সবাই রুম থেকে বের হয়ে গেল। তার দু’চোখ বন্ধ। কয়েকটি এলোমেলো চুল তার মুখের উপর পড়ে আছে। আমি হাল্কা স্পর্শ করে তার মুখের চুলগুলো সরিয়ে দিচ্ছিলাম। আমার হাতের মৃদু স্পর্শেই সে কেমন যেন শিহরিত হলো এবং চোখ বন্ধ করেই সে তার কোমল হাত দিয়ে আমার হাত ধরে ফেললো। তারপর চোখ খুলে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। তার চাহনিতে এমন ছিলো যেন সে আমাকে হাজার বছর পর দেখছে।
তখন জীবনানন্দ দাশের কবিতার দুইটি লাইন মনে পড়ে গেলো।
“বলেছে সে, এতদিন কোথায় ছিলেন?
পাখির নীড়ের মতোন চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।”
তারপর এই সাতদিনে দু’জনের দুঃখ কষ্টের কথা বলতে বলতে কখন অনেক সময় পার হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না। যখন ঘড়িতে রাত আটটা তখন মেঘলাকে কোন মতে বুঝিয়ে আবার সকাল বেলাতেই আসব বলে চলে আসতে যাচ্ছি তখন তার দু’চোখে আবার জলে ভরে গেলো। কিছু বলার জন্য তার ঠোঁট কাঁপছে অথচ কিছু বলছেনা। তাই আমি তার চোখের জল মুছে দিয়ে একটি হাত ধরে বললাম-
-মেঘলা, তুমি কি কিছু বলবে?
-সে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো। তারপর সে আমার মুখের কাছে তার ঠোঁট এনে আলতো ভাবে আমার ঠোঁটে চুমো এঁকে দিয়ে ক্ষীণস্বরে বলল-
-যতটা তোমাকে ভালোবেসেছিলাম ততখানি ভালোবাসা দিতে পারিনি তোমাকে। ভালো থেকো।
এটাই ছিলো আমাদের দু’জনের ভালোবাসার প্রথম এবং শেষ চুমো উপহার। শেষ বাক্যটি বলার পর সে এক দৃষ্টিতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
চোখে ঘুম নেই। শুধু প্রহর গুনছি কখন ভোরের আলো ফুটবে আর আমি মেঘলার কাছে ছুটে যাবো। এমন সময় হঠাৎ আমার চোখ পাশের ফ্ল্যাটের জানালায় চলে গেলো। দেখলাম ছায়ামূর্তির মতো কে যেন আবছা আলোয় দাঁড়িয়ে আছে। পরে বুঝতে পারলাম এটা সেই ষোড়ষী মেয়েটি যাকে একবার এই এখানেই দেখেছিলাম। আজ তার সাথে চোখাচোখি হওয়ার পরেও লজ্জায় লাল হয়ে পালিয়ে যায়নি মেয়েটি। বরং আমিই সেখান থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলাম। কারণ এখন মেঘলাকে ছাড়া আমি আর কাউকে নিয়ে ভাবতে চাইনা। অবশেষে ভোরের আলো ফুটলো। বাইরে আজ পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ নেই। তার পরিবর্তে একটি পাখি খুব করুণ স্বরে ডাকছে। মনটাও কেমন যেন অনুভূত হলো। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বৃষ্টি গুড়ি গুড়ি পড়ছে। তবুও আমাকে যেতেই হবে। পথে ফুলের দোকান থেকে এক গুচ্ছ রজনীগন্ধা কিনে নিলাম। আমি তা হাতে নিয়ে যতই মেঘলার বাড়ির দিকে যাচ্ছি ততই আমার মন কেমন যেন করছে। যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছালাম তখন বুঝতে বাকি রইলো না। আমি ধীর পায়ে মেঘলার রুমে প্রবেশ করলাম। তাকে খাট থেকে নামিয়ে মেঝেতে শুইয়ে রাখা হয়েছে। মেঘলাকে দেখে মনে হলো চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। আমি যখন তার পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে আছি সেই মুহূর্তে আমার মনে পড়ে গেলো, একদিন সে দুষ্টামি করে বলেছিলো।
বেশ কিছুদিন ধরে ঘরের বাইরে বের হতে পারছিনা। জুরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাইরেও বের হতে নিষেধ আছে প্রশাসনের। তাই অলিখিত কারাবন্দি জীবন পার করছি। এছাড়াও নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমরাও কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছিনা। কারণ বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস নামক অদৃশ্য একটি শক্তি মানুষের মাঝে ত্রাস হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু ঔষধের জন্য আমাকে বাইরে বের হতেই হলো। হাতে ডাক্তারের দেওয়া প্রেসক্রিপশন নিয়েই বের হলাম যদি রাস্তায় প্রশাসনের কেউ ধরে তাহলে তা দেখিয়ে এগিয়ে যেতে পারবো। মনে করেছিলাম আশে পাশের দোকান গুলো থেকেই তা পেয়ে যাবো। কিন্তু খোঁজতে খোঁজতে শহরে চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে কয়েকটি দোকান খোঁজে পেয়েও গেলাম।
রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় হঠাৎ ঠান্ডা শীতল হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম। আমি অবাক নয়নে তাকিয়ে দেখলাম কেউ আমাকে ধরে আছে। আমি দেখলাম তার দু'চোখের কোণায় দু'ফোটা অশ্রু জমে আছে। হয়তো যে কোন সময় সেখান থেকে ঝর্ণা ধারার মতো জল গড়িয়ে পড়বে। কিছু বলবো কিন্তু ভাষা খোঁজে পাচ্ছিলাম না। আমার কিছু বুঝে উঠার আগেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। তার চোখের জলে আমার সাড়া শরীর ভীজে একাকার হয়ে গেলো। কান্না একটু থেমে যাওয়ার পর তার নাম পরিচয় জিজ্ঞেস করতেই সে আবার কান্না শুরু করে দিলো।
-কান্না জড়িত কন্ঠে সে বলতে শুরু করলো, আমি তোমাকে অনেক খোঁজেছি কিন্তু কোথাও খোঁজে পাচ্ছিলাম না। আমি অনেককে জিজ্ঞেস করেছি তুমি কোথায় থাকো? কেউ বলেছে তুমি সেখানে আছো, ওখানে আছো, আবার কেউ বলেছে তুমি কয়েক বছর ধরে এই শহরে আছো। তারপর তোমার খোঁজে প্রায় এক সপ্তাহ আগে এখানে এসেছি। কিন্তু তোমার ফোন নাম্বার, ঠিকানা কোন কিছুই আমার কাছে ছিলো না। তবে আমার বিশ্বাস ছিলো তুমি কোন কাজের জন্যে একবার হলেও এখানে আসবে। আজ আমার বিশ্বাস সত্যি হলো। আমি তোমাকে দেখতে পেলাম।
কথা শেষ করে আমি তাকে বিদায় জানাতে চাইলাম। কিন্তু সে আবার কেঁদে ফেললো।
-কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। তারপর সে নিজেই বললো, এই সময়ে আমি তোমাকে বিপদে ফেলতে চাইনা, আমার একটাই অনুরোধ আমি তোমার বাসার গেট পর্যন্ত যেতে চাই। আমাকে না করোনা প্লীজ!! তার ইচ্ছেটাকে পূরণ করার জন্য বাসার গেট পর্যন্ত তাকে নিয়ে আসলাম। শেষে আমিই তাকে অনুরোধ করলাম ভিতরে আসতে। কিন্তু সে ভিতরে আসতে চাইলো না। অবশেষে তাকে বাসার গেট থেকে তাকে বিদায় বলতেই হলো।
বাশবাড়িয়া সমুদ্র
সৈকত বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকত গুলোর মধ্যে ভিন্ন একটি সৌন্দর্য্য বয়ে বেড়াচ্ছে। ভ্রমণ
পিপাসু যে কেউ খুব সহজে এখানে ঘুরে আসতে পারেনবাশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত। বাশবাড়িয়ার সবচেয়ে আকর্ষনীয় মুহূর্ত হলো সূর্যাস্ত অবলোকন করা। তাই
সেখানে বিকাল বেলা গেলে বেশি উপভোগ করতে পারবেন। অপূর্বসেই বিকাল আপনাকে বার বার সেখানে যেতে উৎসাহিত করবে। দিন যতই যাচ্ছে
বাশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত ততই পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় ও দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি
পাচ্ছে। সেখানে আকর্ষনীয় একটি স্টীলের ব্রীজ আছে যা দিয়ে আপনি সমুদ্রের বুকে হেটে বেশ
কিছু দূর যেতে পারবেন। আর হেটে যাওয়ার সময় সমুদ্রের জলে আপনি আপনার পা ভিজিয়ে মন ভরিয়ে
তুলতে পারবেন। সেই সাথে ঝাউ গাছের সারি, খোলামেলা প্রকৃতি, পিকনিক স্পট, সবুজ ঘাসের
ছোয়া আপনার মনকে আনন্দে ভরিয়ে তুলবে।
যেহেতু বাশবাড়িয়া
সমুদ্র সৈকত বিকালের সৌন্দর্য্য ফুটে উঠে তাই সকাল বেলা আপনি সীতাকুন্ডের ঝর্ণা, ইকো
পার্ক এবং সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি চন্দ্রনাথ পাহাড় দেখে আসতে পারেন। তবে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের
উঠার সময় অবশ্যই সঙ্গে পানি ও শুকনা খাবার রাখার চেষ্টা করবেন।
ঢাকার সায়দাবাদ থেকে সীতাকুন্ডে
আসে এমন অনেক বাস পাবেন। অর্থাৎ চট্টগ্রামগামী যে সকল বাস আসে সে বাসে করেই আপনি বাশবাড়িয়া
আসতে পারবেন। যেখান থেকেই আসুন আপনাকে সীতাকুন্ডের বাশবাড়িয়া বাজারে নামতে হবে। ঢাকা
থেকে বাস এর মানভেদে ভাড়া নিবে ৩০০-১০০০ টাকা। আর যারা চট্টগ্রাম থেকে আসবেন অলংকার
মোড় থেকে বাস, ম্যাক্সি বা সিএনজি আসতে পারবেন। বাস ভাড়া ৪০-৫০ টাকা নিবে। বাজারে নামার
পরে ২.৫ কিলোমিটার পথ অটোতে করে যেতে পারবেন। ভাড়া জন প্রতি ২০ টাকা নিবে। সিএনজি বা
অটো নেওয়ার সময় চালকদের সাথে ভালো ভাবে দরদাম করে নিয়ে যাওয়াই ভালো।
সীতাকুন্ডে থাকার জন্য বেশ
কয়েকটি হোটেল রয়েছে। এদের মধ্যে হোটেল সায়মন অন্যতম। ভাড়া পড়বে ৩০০-৭০০ টাকা। এছাড়া
সেখানে বেশ কয়েকটি রেস্ট হাউস আছে আপনারা সেখানেও যোগাযোগ করে থাকতে পারবেন। এখানে
বেশ কয়েকটি মোটামুটি ভালো মানের রেস্তোরা আছে সেখানে আপনি খাবার খেতে পারবেন। আল আমিন রেস্তোরা এর অন্যতম।
ভ্রমণ মানেই আনন্দ এটা আমরা
সবাই জানি। ভ্রমণের আনন্দ তখনই পরিপূর্ণ ও আনন্দের হয় যখন ভ্রমণ থেকে সুস্থভাবে ফিরে আসতে
পারি। তাই ভ্রমণের আগেই খেয়াল রাখতে হবে আপনি সুস্থ আছেন কিনা। কারণ সীতাকুন্ডের পাহাড়,
ঝর্ণা, বন দেখতে অনেকটা পথ আপনাকে পায়ে হেটেও যেটে হবে। তাই দেহে শক্তি সঞ্চয়ের জন্য
সাথে শুকনো খাবার ও প্রচুর পরিমানে পানি নিবেন।
সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ ও তারা যখন খোঁজা হয় তখন আমাদের ওই দূর আকাশে তাকিয়ে
দেখতে হয়। তেমনি প্রকৃতির সৌন্দর্য্য পাহাড়, ঝর্ণা, সমুদ্র দেখতে হলে আমাদের সীতাকুন্ড
ভ্রমণষ করা উচিত। প্রকৃতির সৌন্দর্যের লীলাভূমি এখানে আসলেই খোঁজে পাওয়া যাবে। শুধু
সৌন্দর্য্য খোঁজে বেড়ানো নয় কর্ম ব্যস্ততার মাঝে নিজের জন্য একটু সময় বের করে প্রকৃতির
সাথে কিছু সময় অতিবাহিত করা। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি ইট পাথরের শহর থেকে বেরিয়ে
যখন এখানে একবার ঘুরতে আসবেন তখন মন ও শরীর এক অন্য রকম অনুভূতিতে ভরে যাবে।
ভ্রমণ পরিকল্পনাঃ
যে কোন কাজ করতে গেলে সবার আগে যে কাজটি করতে হয়
তা হলো সুন্দর একটি পরিকল্পনা । যদি আপনার পরিকল্পনা ভালো হয় তাহলে আপনার সব কিছুই
ভালো ভাবে শেষ হবে। তাই ভ্রমণের আগে আপনাকেও ভালো একটি পরিকল্পনা করতে হবে। কখন
যাবেন, কোথায় থাকবেন, কিভাবে যাবেন, কিসে যাবেন এবং ভ্রমণে কে কে যাচ্ছেন সব কিছু
মাথায় রেখে ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে হবে। ছোট দলে যাবেন নাকি বড় দল নিয়ে যাবেন সেভাবেই
ভেবে চিন্তে ভ্রমণ পরিকল্পনা করা ভালো। আজ আমার নিজের সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ ভ্রমণের
অভিজ্ঞতানুযায়ী কিছু কথা আপনাদের সাথে সহভাগিতা করবো। আশা করি ভবিষ্যত ভ্রমণে আপনাদের
কাজে আসবে।
সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ মন্দির ও পাহাড়ঃ
সীতাকুন্ডের নাম শুনলেই রামায়ণের রাম, লক্ষণ ও
সীতার কথা মনে পড়ে যাবে। এসব ইতিহাসের কথা আমরা অনেক শুনেছি। সাধারণত সীতাকুন্ড
পাহাড়টি হিন্দু ধর্মালম্বীদের অন্যতম পবিত্র তীর্তস্থান নামে খ্যাত। আজ আমি আপনাদের
পাহাড়ে নিয়ে যাবো। যাকে বলা হয় সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়। ইতিহাস বলে, এই পাহাড়াটি
হিমালয়ের দক্ষিন পূর্ব দিক ঘুরে ভারতের আসাম এবং ত্রিপুর রাজ্যের মধ্য দিয়ে ফেনী
নদী পার হয়ে চট্টগ্রামের সঙ্গে মিশেছে। এই পাহাড়ের পাদদেশে নির্মিত হয়েছে
সীতাকুন্ড ইকোপার্ক। সীতাকুন্ড শহরের পূর্বে অবস্থিত চন্দনাথ পাহাড়টি উচ্চতা প্রায়
১০২০ ফুট। এটা চট্টগ্রাম জেলার সর্বোচ্চ উচু পাহাড়। এখানে রয়েছে সহস্রধারা ও সুপ্তধারা
নামে দুটি ঝর্ণা। মিরসরাই অংশে অবস্থিত অপরুপ সৌন্দর্য্যের রানী খৈয়াছড়া ঝর্ণা দেখলে
আপনার মন ভরে যাবে। যদিও সেখানে পৌঁছাতে আপনাকে পায়ে হেটে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে
হবে। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পর কষ্ট করে পায়ে হেটে এসেছেন তা ভুলেই যাবেন।
সেখানে না গেলে প্রকৃতির সৌন্দর্য্যকে ভাষায় প্রকাশ করা অনেকটাই কঠিন। তাই ঘুরে আসুন
এবং উপভোগ করুন প্রকৃতি কত সুন্দর।
চন্দ্রনাথ পাহাড় সীতাকুন্ডের বাজার থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
আপনি যেদিক থেকেই আসেন (ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম) আপনাকে সীতাকুন্ড বাজারে নামতে হবে। তারপর
বাজার থেকে পায়ে হেঁটে বা অটো সিএনজিতে করে চন্দ্রনাথ পাহাড়েরর নিচের গেট পর্যন্ত যেতে
পারবেন। যাওয়ার সময় সেখানকার হিন্দু ধর্মালম্বীদের বেশ কিছু স্থাপনা চোখে পড়বে। এই
পাহাড়ের পাদদেশে বেশ কিছু ত্রিপুরা আদিবাসি জনগোষ্ঠী বাস করে। আপনি সময় করে পাহাড়ের
গভীরে যান তাহলে আদিবাসীদের জুম ক্ষেত দেখতে পাবেন। তবে একা একা অপরিচিত এলাকায় না
যাওয়ায় ভালো। সেখানে বেশ কিছু গাইড পাবেন, আপনি চাইলে তাদের সাথে কথা বলে গাইড হিসেবে
নিতে পারবেন। চন্দ্রনাত পাহাড়ে উঠার সময় আপনি ছোট্ট একটি ঝর্ণা দেখতে পাবেন। তবে এই
ঝর্ণায় তেমন পানি নেই। এই ঝর্ণার ডান এবং বাম দিকে দুটি রাস্তা পাবেন। উপরে উঠার সময়
বাম দিকের রাস্তা দিয়ে উঠলে ভালো, তাহলে কষ্ট কম হবে। পাহাড়ে উঠার আগে সম্ভব হলে একটি
বাঁশের লাঠি কিনে কিনে নিবেন। লাঠির মূল্য
১০ টাকা। চন্দ্রনাথ মন্দির পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লাগবে ১:৩০ মিনিট থেকে দুই ঘন্টা। তবে
এর কম বেশিও লাগতে পারে।
করণীয় ও সাবধানতাঃ
১. বর্ষাকালে রাস্তা পিচ্ছিল
থাকে তাই সাবধানে উপরে উঠতে হবে।
২. লাঠি সাথে রাখবেন।
৩. পরিবেশ নষ্ট করে প্লাস্টিক
জাতীয় কোন কিছু পাহাড়ে না ফেলা।
৪. শুকনা খাবার সাথে রাখবেন।
৫. যথেষ্ট পরিমানে পানি
সাথে রাখবেন।
এখন অবশ্য উপরেও ফেরি করা
দোকানে পানি ও শুকনা খাবার পাওয়া যায়। তবে দাম একটু বেশি দিতে হবে।
কিভাবে যাবেনঃ
চন্দ্রনাথ মন্দির/পাহাড় চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড উপজেলায়
অবস্থিত। তাই আপনি যেখান থেকেই আসেন সীতাকুন্ড বাজারে নামতে হবে। যারা ঢাকা থেকে আসতে
চান তারা চট্টগ্রাম গামী বাসে করে আসতে পারেন। বাসের সুপারভাইজারকে বলে রাখলে আপনাকে
সীতাকুন্ড বাজারে নামিয়ে দিয়ে যাবেন। আর যারা চট্টগ্রাম বাজার থেকে আসবেন তারা এ,কে
খান বা অলংকার মোড় থেকে টেম্পু বা মেক্সি জাতীয় পরিবহণ দিয়ে চলে আসতে পারেন।
চট্টগ্রাম থেকে জন প্রতি ৩০-৫০ টাকা নিবে (বর্তমান)। আর ঢাকা থেকে আসলে চট্টগ্রামের
ভাড়া রাখবে। সীতাকুন্ড বাজারে নেমে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই বলে দিবে কিভাবে যেতে হয় চন্দ্রনাথ
মন্দিরে ।
কোথায় খাবেনঃ সৌদিয়া হোটেল/রেস্তোরা,
আপন, আল-আমিন নামের বেশ কিছু রেস্তোরা থাকলেও আমরা আল-আমিন রেস্তোরার খাবারের মান ও
তাদের পরিবেশ ও পরিবেশনার মান ভালো পেয়েছি। আমাদের জন প্রতি খরচ পড়েছিলো মাত্র ২২০
টাকা।
সবুজ
পাহাড় আর ঝর্ণার স্বচ্ছ জলে কিছুক্ষণ গা ভিজিয়ে মন প্রাণকে শীতল করে আনন্দে ভরিয়ে তোলতে
ঘুরে আসতে পারেন ঝর্ণার রানী নামে খ্যাত মিরসরাইয়ের খৈয়াছরা ঝর্ণা। শিল্পীর নান্দনিক
তুলিতে আঁকা যেন এই ঝর্ণাটি। তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রতিদিন অনেক ভ্রমণ পিপাসু মানুষ
তার কাছে ছুটে আসে। দেশের অনেক গুলো বৃহত্তম ঝর্ণার মধ্যে এটি একটি। খৈয়াছড়া এলাকার
পাহাড়ে অবস্থান হওয়ার কারণে এর নামকরণ করা হয়েছে খৈয়াছরা ঝর্ণা। এর গঠনশৈলি অন্যান্য
ঝর্ণা গুলো থেকে একটু আলাদা। এর মোট ০৯ টি ধাপ আছে যা বাংলাদেশের আর কোন ঝর্ণাতে তা
দেখা যায়নি। এছাড়া খৈয়াছরা পাহাড়ে প্রতিনিয়ত জ্বলে এমন একটি জায়গা আছে যা সেখানকার
একটি মূল আকর্ষণের একটি। স্থানীয় অধিবাসীদের ভাষ্যমতে বৃষ্টিতেও নাকি এই আগুন নিভে
না। তাই প্রতি বছর অনেক ভ্রমণ পিপাসু এই খৈয়াছরায় ভ্রমণ করতে আসে। অনেকের ধারণা যাতায়াত
উন্নত ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন হলে এখানে আরও অনেক মানুষ আসবে।
অবস্থানঃ
মিরসরাই
উপজেলার খৈয়াছরা ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পাশে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪.২
কিলোমিটার পূর্বে এর অবস্থান। এক কিলোমিটার পথ গাড়িতে যাওয়ার পর বাকি পথ যেতে পায়ে
হেঁটে যেতে হবে। বাঁশের সাকো, জমির আইল, আঁকাবাকা পাহাড়ী পথ, ছোট ছোট কয়েকটি ছরা, অন্তত
৪টি পাহাড় পেরিয়ে যখন সেখানে পৌছে ঝর্ণার জলে গা ভিজিয়ে নিবে তখন প্রাণটা জুড়িয়ে যাবে
যে কোন পর্যটকের। ছুটির দিনে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য এবং সবুজে সমারোহ পাহাড় ও ঝর্ণার
সেতুবন্ধন দেখতে অনেক শিক্ষার্থী ও পর্যটক খৈয়াছরায় ছুটে আসেন। বর্তমানে খৈয়াছড়রা ঝর্ণা
জাতীয় উদ্যানের আওতাভুক্ত একটি দর্শনীয় স্থান। পর্যটকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে অবাধ
যাতায়াত ও নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে।
কিভাবে
যাবেনঃ
ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল
থেকে যাতায়াতের জন্য চট্টগ্রামগামী হানিফ, শ্যামলী, এনা, ইউনিক, সৌদিয়া, এস আলম গ্রীন
লাইন সহ আরও অনেক বাস সার্ভিস আছে। ভাড়া নিবে এসি ১০০০- ১২০০ টাকা আর নন এসি ৪৮০ টাকা।
কেউ ট্রেনে আসতে চাইলে কমলাপুর থেকে উঠে ফেনীতে এসে নেমে যেতে হবে। তারপর সেখান থেকে
ভেঙ্গে ভেঙ্গে বাস ও সিএনজি করে মিরসরাই আসতে হবে। তবে বাসে আসাটায় সব থেকে ভালো হয়।
বাসে আসলে আপনাকে মিরসরাই পার হয়ে বড়তাকিয়া বাজারের আগে খৈয়াছরা আডিয়াল স্কুলের সামনে
নামতে হবে। তারপর সেখানে নেমে স্থানীয়দের জিজ্ঞেস করলে কিভাবে সেখানে যেতে হবে তারা
দেখিয়ে দিবে। সেখান থেকে ঝিরি পর্যন্ত আপনি সিএনজি নিতে পারেন। ভাড়া দরদাম করলে ৭০-১০০
টাকা নিবে। খৈয়াছরা ঝর্ণায় যাওয়ার পথ একটায়। তাই আসা যাওয়ার মাঝে অনেক ভ্রমণ পিপাসুর
দেখা পেয়ে যাবেন। আর আপনি চাইলে বাস থেকেই নেমেই গাইড নিয়ে নিতে পারেন।
করণীয়ঃ
পাহাড়ী উচু নিচু পথ দেড় ঘন্টার মতো হাঁটতে
হবে। তাই বাস থেকে নেমেই কিছু খেয়ে সেখান থেকে রওনা দিবেন। সাথে পানি ও শুকনো খাবার
রাখবেন যেন পথে দূর্বল হয়ে না পড়েন। সাবধানে হাঁটবেন যেন কোন দূর্ঘটনা না ঘটে।
থাকা-
খাওয়াঃ
মিরসরাই ও সীতাকুন্ডে থাকা ও খাওয়ার জন্য
বেশ কিছু ভালো হোটেল ও রেস্তোরা আছে। আপনি সেখানে নাম মাত্র মূল্যে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা
করে নিতে পারবেন।
কোলাহল শহর জীবনের সীমাহীন ব্যস্ততা ছেড়ে কিছু সময় প্রকৃতির
সাথে সময় কাটাতে চাইলে সময় করে কক্সবাজারের মারমেইড বিচ রিসোর্টে ঘুরে আসতে পারেন।
যেখানে প্রকৃতির মাঝেও আপনি আধুনিকতার অপূর্ব সাদৃশ্য খুঁজে পাবেন। সেই সাদৃশ্য আপনার
মন ও প্রানকে করবে পুলকিত দিবে সজীবতা ও প্রানবন্ত মন।
কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে মাত্র
১৬ কিলোমিটার দূরে জেলেদের পেঁচার দ্বীপ নামে একটি গ্রাম। এই গ্রামের পাশ ঘেঁষে বয়ে
গেছে রেজু খাল। আর সেখানেই গড়ে উঠেছে নান্দনিক মারমেইড বিচ রিসোর্ট। হিমছড়ি ও ইনানী
বিচের মাঝামাঝি জায়গায় এর অবস্থান। হিমছড়ি থেকে ইনানী যাওয়ার পথে রাস্তার পশ্চিম পাশে
ছোট ছোট অনেক কুড়ে ঘর দেখা যায়। এক পাশে ঝাউবন সমৃদ্ধ সমুদ্র সৈকত অন্যপাশে আকাশছোঁয়া
অনেক গুলো পাহাড়। আর মধ্যভাগ দিয়ে চলে গেছে টেকনাফ পর্যন্তপ্রায় ৮৪ কিলোমিটার কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক।
কোলাহল মুক্ত অবাক করার মতো সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে এই রিসোর্টটিতে।
ব্যতিক্রমী এই রিসোর্টে যে একবার ঘুরে এসেছে তাকে সেখানে
বার বার টেনে নিয়ে যাবে।
বিয়ের পরেই আমাদের প্রায় সবারই ইচ্ছা থাকে হানিমুন (মধচন্দ্রিমা)
করতে যাওয়ার। দেশের ভিতরে হানিমুন করার জন্য অন্যতম শ্রেষ্ঠ জায়গা মনে হলো কক্সবাজারের
এই রিসোর্টটিকে । আমরা আগেই বুকিং দিয়ে গিয়েছিলাম।
তাই এয়ারপোর্ট থেকে তাদের একটি মাইক্রোবাস আমাদের নিতে এসেছিলো। মাইক্রো ভাড়া বাবদ ২০০০
টাকা দিতে হয়। আর সিএনজি বলে রাখলে ভাড়া নিবে ৪০০ টাকা।
সেখানে পৌঁছার পর তাদের নিজস্ব বাগানের ফুলের মালা পড়িয়ে
যখন বরণ করে নেওয়া হয় তখন এক অদ্ভূদ অনুভূতি চলে আসবে।
তারপর সদ্য গাছ থেকে তোলে আনা ডাবের জলে আপনার মনের ও প্রাণের তৃষ্ণা ভরিয়ে দিবে।
সেখানে বিভিন্ন দাম ও মানের ৩০ টার মতো কটেজ আছে। বাইরে
থেকে দেখলে মনে হবে কুড়ে ঘর ছনের ছাউনী। কিন্তু কুড়ের ঘরের ভিতরটা আধুনিকতার ভরপুর।
বিশেষ করে স্নানরুমে ঢুকলে মনটাই যেন ভরে যাবে। বাজারের শ্যাম্পুর বদলে নিজস্ব ভেষজ
শ্যাম্পু, সাবান ও অন্যান্য পরিবেশন করা থাকে।
সময় করে সুইমিং পুলে গিয়ে কিছুক্ষণ সাঁতার
কেটে সময় কাটাতে পারেন। তাছাড়া কায়কিং করতে পারেন সঙ্গীকে
সাথে নিয়ে। সাঁতার জানলেও লাইভ জ্যাকেট পড়ে নিতে ভুলবেন না। জীবনের জন্য সতর্ক থাকা
ভালো। সমুদ্র সৈকতে সাইকেলিং করা আর একটি অন্যরকম আনন্দ দিবে।
প্যাকেজে গেলে কখন কি খাবেন তা নিয়ে আপনাকে কোন চিন্তা
করতে হবেনা । তারাই সময় মতো কখন কি খাওয়ানো হবে জানিয়ে দিবে। খাবারের স্থান আপনার পছন্দ
মতো তারা সাজিয়ে দিবে। রাতে থাকবে ভেরি স্পেশিয়াল ক্যান্ডেল নাইট ডিনার। প্রাকৃতিক পরিবেশে খাবার পরিবেশন ও খাবারের মান
তৃপ্তি দিবে আপনাকে। বিভিন্ন রকমের সী ফুড ও স্বাদে ভরপুর থাকবে আপনার টেবিল। আর যারা
ওয়াকিং গেস্ট হিসেবে সেখানে যান মনে রাখা ভালো যে, সেখানে মানের কারণে খাবারের দামটা
একটু বেশি।
মারমেইডে প্রায় ৫০ আইটেমের বুফেট ব্রেকফাস্ট এর ব্যবস্থা
আছে। এটা সকল গেস্টের জন্য উন্মুক্ত থাকে। সকাল ৭ টাকা থেকে ১০ টা পর্যন্ত যতবার খুশি
খেতে পারবেন। কি নেই সেই ব্রেকফাস্টে? বিভিন্ন রকম ফ্রেশ জুস থেকে শুরু করে দেশি, বিদেশি
বিভিন্ন আইটেম পাবেন। মূলত অনেক বিদেশী এখানে অবস্থান করে তাই এই ব্যবস্থা করা।
বিকেল বেলা কোলাহল মুক্ত পরিবেশে বীচ ধরে হেঁটে বেড়াতে
চমৎকার লাগে। হাটতে হাটতে রেজু খালের পাড়ে চলে যাওয়া যায়। খালের বুক বেয়ে সাম্পান নৌকা
গুলো যাওয়া আসা করতে দেখা যাবে। একটু হেটে বেড়ানোর সময় খেয়াল করলে দেখা যাবে আপনার
উপস্থিতি টের পেয়ে ছোট ছোট লাল কাঁকড়া গুলো দৌড়ে পালাচ্ছে। অপূর্ব লাগবে সেই দৃশ্যগুলো।
রাত পর্যন্ত ঘুরে বেড়ালেও ভয়ের কিছু নেই। পুরো বীচ জুড়েই আছে তাদের নিরাপত্তা কর্মীরা।
আমি আমার অভিজ্ঞতায় বলতে চাই, নিরিবিলি সুন্দর প্রাকৃতিক
দৃশ্যের সাথে সমুদ্রকে আলিঙ্গন করলে চাইলেআপনিও আসতে পারেন মারমেইড বিচ রিসোর্টে। আমার বিশ্বাস আপনার ছুটি ভালো কাটবে।
বিমান, বাস, ট্রেন এই তিন পথেই সেখানে যেতে পারবেন। তবে
ট্রেনে গেলে চট্টগ্রামে নামতে হবে। সেখান থেকে আবার বাসে করে কক্সবাজার আসতে হবে। কক্সবাজার
কলাতলী থেকে মারমেইড পর্যন্ত সিএনজি ভাড়া নিবে ১৫০- ২০০ টাকা। সময় লাগবে ২০-২৫ মিনিট।