Biloy Mrong

Biloy Mrong

Thursday, March 1, 2018

অনিশ্চিত জীবনের হাতছানি (ছোট গল্প) Romantice Love Story


অনিশ্চিত জীবনের হাতছানি


গ্রীষ্মের অসহ্য তাপদাহের পড়ন্ত বিকেল। ফ্যান চলছে তবুও নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে। কারণ সেই সকাল থেকে কাজ করছে এখনও সেই একই ধারা অব্যাহত আছে। শুধু দুপুরের খাবারের জন্য আধা ঘন্টা সময় নিয়েছিলো। কাজ প্রায় শেষ এমন সময় আকাশ কোথা থেকে যেন হুড়মুড় করে আসলো। 

-মুখে একরাশ হাসি দিয়ে আকাশকে জিজ্ঞেস করলো, কেমন আছে? আজ সারাদিনে এই প্রথম তোমাকে দেখলাম। এতক্ষণ কোথায় ছিলে? আকাশ বললো,
তোমার প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বলবো বেশি ভালো নেই, কারণ আজ বিশেষ দিনেও তোমাকে এখনও কাজেই দেখছি। আব দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর হলো- আজ সারাদিন অফিসের কাজে বাইরে সারাক্ষণ বাইরে ছিলাম। তারপর এদিক সেদিক ছুটাছুটি করে এই একটু সময় করে তোমার জন্য সামান্য উপহারটি নিয়ে এলাম। শুভ জন্মদিন। কথাটি বলেই আকাশ উপহার ও কয়েকটি ফুটন্ত গোলাপ তার দিকে বাড়িয়ে দিলো। 

আজ যার জন্মদিন তার নাম নন্দিতা আকাশের কাছ থেকে শুভেচ্ছা বাণী শুনে নন্দিতা বিস্মিত হয়ে গেল !! কাজের ব‌্যস্ততার কারণে নিজের জন্মদিনটার কথাও ভুলে গিয়েছিল উপহারটা হাতে নিয়ে নন্দিতা আকাশকে ধন‌্যবাদ জানিয়ে বসতে বলল কিন্তু আকাশ কাজের কথা বলে দ্রুত পায়ে বাইরে বের হয়ে গেল তারপর নন্দিতা বাকি কাজগুলো শেষ করে সন্ধ‌্যায় বাসায় ফিরল

আকাশের সাথে নন্দিতার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রায় এক বছর নন্দিতা এই অফিসে কাজ করছে তিন বছর ধরে কিন্তু আকাশ মাত্র গত বছর এই অফিসে জয়েন করেছে। একই ডিপার্টমেন্ট হওয়াই একদিন দুদিন করে তাদের মধ‌্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে এখন আপনি নয় তুমি বলেই দুজনকে সম্বোধন করে রাতে হাতের সব কাজ শেষ করে আকাশের দেওয়া উপহারটি খুলে দেখতে পেল সমরেশ মজুমদারের লেখা একটি উপন‌্যাস সাতকাহন” এই বইটি সে আগেই পড়েছে তবুও বন্ধু দিয়েছে বলে কথা তাই যত্নসহকারে বইয়ের সেল্ফে রেখে দিলো বইটি যখন সে পড়েছিল তখন থেকেই উপন‌্যাসের নায়িকা দীপাবলীর মতো একজন সাহসী, আত্মনির্ভরশীল নারী হওয়ার বাসনা জাগে তার, আর অনেক ক্ষেত্রেই সফল হচ্ছে তারপর শুভেচ্ছা কার্ড খুলতে গিয়ে সে একটি চিঠি পেল
চিঠিতে লেখা ছিল-----

কাগজে কলম রেখে তোমাকে কিছু লিখবো তাতেও বুকটা কেঁপে উঠলো। তবুওকলম হাতে নিয়ে লিখতে বাধ‌্য হলাম। কারণ না বলা কথাগুলো হৃদয়ে সঞ্চিত করে রাখলে কষ্টটা আরও বাড়ে। অনেকদিন থেকেই আমি তোমাকে আকার ইঙ্গিতে অনেকবার আমার হৃদয়ের কথা বলতে চেষ্টা করেছি। মুখেও বলতে চেয়েছি কিন্তু মনে ভয় ছিল তুমি যদি প্রত‌্যাখান কর। তবুও মনে সাহস নিয়ে হৃদয়ের অব‌্যক্ত কথাটি আজ বলেই ফেললাম। জানিনাতোমার হৃদয় আমার ভালোবাসাকে গ্রহণ করবে কিনা। হৃদয় গহীনে গ্রহনীয় না হলেও আমার ছিন্ন ভালোবাসাকে তুচ্ছ করন। লেখাটিপেয়ে তুমি কি ভাবছ জানি না। যা কিছুই ভাব সিদ্ধান্তটা তাড়াতাড়িজানিয় দিও। কারণ অপেক্ষা যে কতো কষ্টের একমাত্র সেই জনে যে অপেক্ষা করে।
                                                                 -ইতি আকাশ

বেশ কয়েবার চিঠিটা পড়লো সে তারপর বিছানায় শুয়ে অনেক্ষণ এই নিয়ে চিন্তা করল আকাশ ছেলে হিসেবে খুব ভালো সহজ সরল নম্র মিশুক এবং দেখতেও সুদর্শন। তাই যে কোন মেয়েই তার প্রেমে পড়ে যেতে পারে কিন্তু তার সাথে প্রেম ভালোবাসাকে আমার পরিবার সমাজ কখনই মেনে নিবে না কারণ দুজনের ধর্ম আলাদা বিশেষ করে আমি যদি এই কাজ করি তাহলে আমার জন্মদানকারী পিতামাতা অনেক বেশী কষ্ট পাবে কারণ জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত আমি তাদের দ্বারা লালিত পালিত হয়ে আসছি এখন আমি যদি তাদের সাথে প্রতারণা করি তাহলে তারা ভাববে আমরা সন্তানদের সঠিক মূল‌্যবোধ দিয়ে গড়ে তুলতে পারিনি এসব ভেবে তারা সারাজীবন অনেক দুঃখ-কষ্ট পাবে কিন্তু যদি সুখী সুন্দরভাবে জীবনযাপন করি তাহলে এই পিতা-মাতায় সবচেয়ে বেশী খুশী হবে এই ভেবে যে তাদের উৎপাদিত ফসল প্রচুর ফলে ফলশালী হয়েছে অন্তত মা-বাবার কথা চিন্তা করে আমি এই প্রস্তাবটি ফিরিয়ে দিবো

এই সব চিন্তা করছে- হঠাৎ তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী হ‌্যাপির কথা মনে পড়ে গেলো কয়েক বছর আগে হ‌্যাপি তার মা-বাবার বাধা সত্তেও একজন যুবকের হাত ধরে পালিয়ে বিয়ে করেছিলো। কয়েক মাস নাকি তারা খুব ভালই ছিলো। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই হ‌্যাপির উপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন তবুও কোন মুখে মা-বাবার কাছে ফিরে যাবে এই ভেবে স্বামীর শত নির্যাতন সহ‌্য করে হলেও সেখানেই থাকলো স্বামীর মন পরিবর্তন  পূর্ব ভালোবাসা পাবার আশায় কিন্তু সেই হিংস্র স্বামী যে তাকে অনেক ভালোবাসবে, অনেক স্নেহ দিবে এবং সর্বদা রাণীর মতো মাথায় উঠিয়ে রাখবে বলে কথা দিয়েছে এবং তাকে মা-বাবা, ভাইবোন  সমস্ত আত্মীয় স্বজন থেকে বিছিন্ন করে নিয়ে এসেছিল সেই একদিন রাতে বাইরে থেকে ফিরে এসে মাথায় চেপে রাখা সর্বস্ব রাগ দিয়ে ছয় মাসের অন্তসত্ত্বা হ‌্যাপির তলপেটে সজোড়ে লাঠি মারে আর তখনই হ‌্যাপি অসহ‌্য যন্ত্রনায় চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তার চিৎকার শুনে পাশের বাসার লোকজন এসে তার এই অবস্থা দেখে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় কিন্তু অধিক রক্তক্ষরণ এবং পেটের শিশুটির মৃত‌্যুর কারণে শেষ রক্ষা হলো জীবন অবসানের মাধ‌্যমে। একই সাথে দুটি জীবনের সমাধি। আজ অনেকদিন পর বান্ধবীর লোমহর্ষক মৃত‌্যুর কথা চিন্তা করতে গিয়ে বন্ধবীর জন‌্য তার প্রাণটা কেঁদে উঠলো কখন যে তার দু’চোখ  থেকে অশ্রুধারা গাল বেয়ে বুক পর্যন্ত গড়িয়ে পড়লো সে বুঝতেই পারলো না।  

দক্ষিনের খোলা জানালা দিয়ে মৃদু বাতাস এসে তার মনে কিছুটা দোলা দিয়ে গেল সে বিছানা থেকে নেমে জানালার পাশে এসে খোলা বিস্তীর্ণ আকাশের দিকে তাকালো অফিস থেকে ফেরার সময় মেঘশূণ‌্য নীলআকাশ দেখেছিল সেই নীল এই অল্প কিছু ক্ষণের  মধ্যেই কালো শেঘে ঢেকে গেছে প্রকৃতিও যেন মানুষের মনের কথা বুঝতে পারে এসব কথা ভাবছে আর তখনই বৃষ্টি ধারা পড়তে থাকে মানুষের জন‌্য প্রকৃতির এই মায়া কান্না নন্দিতা আজই প্রথম উপলব্ধি করলো

সপ্তাহিক ছুটির পর নন্দিতা আগের মতোই অফিসে গেলো তবে আগের মতো তাকে আজ হাস‌্যজ্জ্বোল দেখাছিলো না কারণ এখনও সে আকাশের ব‌্যপারে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি আকাশকে সরাসরি না বলবে একথাও সে মুখ দিয়ে বলতে পারবে না এভাবেই দিনের কাজটা প্রায় শেষ তখন আকাশ লাজুক মুখে নন্দিতার দিকে এগিয়ে আসলো এমন লাজুক চেহেরায় আকাশকে সে এর আগে কখনও দেখেনি লাজুক হলে ছেলেদের মুখটাও এত সুন্দর হয় নন্দিতা আজই প্রথম দেখলো কে কিভাবে শুরু করবে কথা খোঁজে পাচ্ছিলনা তাই এক মিনিট নীরবে অতিবাহিত হওয়ার পর আকাশই প্রথম মুখ খুললো 
-প্রশ্ন করলো, কেমন আছো
-আজ সারাদিন এক বিন্দু পরিমানও যে মুখ থেকে হাসি বের হয়নি সেই নন্দিতার মুখ  থেকে অনায়াসে এক ঝলক হাসি বেরিয়ে আসলো 
-তারপর বলল, এই প্রশ্ন করতে এতো সময় লাগলো তোমার
-নন্দিতার মুখে হাসির ঝিলিক দেখে আকাশের মনে কিছু সাহস ফিরে আসলো মনে মনে ভাবলো সোনার হরিণটা মনে হয় পেয়েই গেলাম 
-তাই স্বাভাবিক কন্ঠে বলল, আমার ভয় হচ্ছিলো যদি তুমি বাক‌্যবানে আমার হৃদয়কে বিদীর্ণ করে দাও 
-তুমি একজন পুরুষ মানুষ হয়ে একজন মেয়েকে দেখে ভয় পাওয়ার কি আছে!
-যাকে ভালোলাগে যার প্রতি দূর্বলতা আছে তাকে ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক 
-নন্দিতার হৃদয় মন আবার কালো মেঘে ঢেকে গেলো 
-‍সে ধীরে ধীরে বলল, কোন কিছু গড়ার আগেই যদি সেটা ভেঙ্গে যায় তাহলে নির্মাণকারী তেমন কষ্ট অনুভব করে না কিন্তু সেটা যদি নির্মানের শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভাঙ্গে তখন সেই নির্মাণকারীর দুঃখ অপরিমিত হয় কারণ তিলে তিলে যত্ন সহকারে গড়ে তোলার প্রতি সবারই  একটা মমতা জাগে আমি যা বলতে চাচ্ছি তা হলো, তোমার সাথে আমার বন্ধুত্ব বেশী দিনের না হলেও মোটামুটি প্রায় এক বছরই বলা যায় এই এক বছরে আমি তোমার কাছ থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ অনেক ভালোবাসা পেয়েছি বন্ধুত্ব করার জন‌্য সুন্দর একটা মন লাগে আমি বিশ্বাস করি তোমার সে মনটা আছে 
-এই কথা শুনে আকাশ বলল, তার মানে তুমি আমার প্রস্তাবে রাজী নও
-রাজী নই  কথা বলছি না তুমি আমার বন্ধু আর বন্ধু হিসেবেই তোমাকে দেখতে চাই
-এই কি তোমার শেষ কথা
-শেষ কথা নয় এইটাই আমার বিশ্বাস বন্ধু, প্রেমিক এবং স্বামী এই তিন ব‌্যক্তি তিন রকমের হয়। কারণ--------- কথা শেষ করার আগেই আকাশ নন্দিতার সামনে থেকে চলে যায়

সন্ধ‌্যায় বাসায় ফিরে আসার পর কোন কিছুতেই তার মন বসছেনা না খাওয়া না ঘুম কোনটাই ভালো যাচ্ছে না নন্দিতা ভাবছে সে কখনও আকাশকে তার সাথে খারাপ আচরণ করতে দেখেনি কিন্তু মানুষ বদলাতে আর কতক্ষণ যেমন তার বান্ধবীর অবস্থা হয়েছিলো না, তাকে নিয়ে আর ভাবতে চাই না যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছি। অবশেষে ওই অফিসে আর চাকরি করবেনা বলেও সিদ্ধান্ত  নিলো সে কারণ প্রতিদিন অফিসে গিয়ে বার বার তাকে দেখার পর আবার কি দুর্ঘটনা ঘটে তা বলা যায় না তাই তাড়াতাড়ি চাকরী হতে অব‌্যাহতির জন‌্য দরখাস্তও লিখে ফেললো সে এবং পরের দিন সকালে দরখাস্ত জমা দিয়ে চাকরি ছেড়ে চলে আসলো 

কিন্তু সেখান থেকে চলে আসার কয়েক দিন পরেই সে আবার আর একটি ভালো চাকরি পেয়ে গেলো। যদিও আকাশকে ভুলতে কিছুদিন সময় লাগবে তবুও কাজের ব্যস্ততার মাধ্যমে অতীতকে ভুলে থাকার চেষ্টা করলো। আর এভাবেই নন্দিতা তার জীবনকে নতুন সম্ভাবনার দিকে নিয়ে গেলো। 
--

2 Post a Comment:

Lipa said...

Wow....!
Nice story.

Lipa said...

সুন্দর হয়েছে...