Biloy Mrong

Biloy Mrong

Thursday, June 14, 2018

ডাক্তার থাকলেও নেই সাপে কাটা রোগের চিকিৎসা



ডাক্তার থাকলেও নেই সাপে কাটা রোগের চিকিৎসা

রাবেয়া খাতুন অসমভব যন্ত্রণায় ছটফট করছে। পাশের বাড়ির জমির আলী এসে দেখে বুঝতে পারলো কিছু একটা কামড় দিয়েছে রাবেয়াকে। ভালো করে তাকিয়ে দেখে যখন বুঝতে পারলো রাবেয়াকে সাপে কামড় দিয়েছে তখন ভয় পেয়ে গেল জমির আলী। নিজের কোমরের গামছা খুলে দ্রুত রাবেয়ার পায়ে বেধে দিলো। একে একে অনেকেই আসতে লাগলো। কিন্তু কেউ তেমন ভালো কোন সিদ্ধান্ত দিলো না । অবশেষে কোথা থেকে একজন কবিরাজ এসে হাজির। সবাইকে দূরে সরিয়ে দিয়ে ঝাড়ফুক শুরু করে দিলো। তারপর রাবেয়াকে পানি পড়া খেতে দিয়ে পায়ের বাধন খুলে দিলো। তার ভাষ্য, রাবেয়াকে সামান্য কীট কামড় দিয়েছে কিছু হবেনা। কিন্তু রাবেয়া তখনও যন্ত্রণায় ছটফট করছিলো। আর সেই মুহূর্তে শহর থেকে ছুটিতে আসা রফিক সেখানে এসে হাজির। রাবেয়ার এই অবস্থা দেখে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলো। কিন্তু সেখানে নিয়ে গিয়েও রাবেয়াকে আর বাঁচানো গেলনা। কারণ, হাসপাতালে সাপে কামড়ের কোন ঔষধ বা ইনজেকশন ছিলো না। সিভিল সার্জন জানালো, তাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাপে কামড়ের কোন ভ্যাকসিন নেই। চিকিৎসকদের ভাষ্য মতে, কোন মানুষকে সাপে কামড় দিলে সর্বোচ্চ আধা ঘন্টার মধ্যে ইনজেকশন পুশ করতে হবে। আর তা করতে না পারলে বিপদ। রাবেয়া খাতুনের বেলাতেও তাই হলো। তাকে জেলা সদর হাসপাতালে নিলে ৫০ মাইলের মতো রাস্তা পারি দিতে হবে। তাতে সময় লাগবে এক ঘন্টার মতো। অবশেষে বিনা চিকিৎসায় কিশোরী রাবেয়া খাতুনকে এই সংসারের মায়া ছেড়ে চির বিদায় নিয়ে চলে যেতে হলো।

Snake
King Copra 


এভাবে প্রতি বছর অনেক মানুষকে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়তে হয়। বর্তমানে সরকার স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন করার জন্য বেশ কিছু ডাক্তারদের জোর করে গ্রামের হাসপাতাল গুলোতে পাঠাচ্ছে। কিন্তু উন্নত  চিকিৎকসা সেবা গুলো বেধে রেখেছে শহরের চার দেয়ালে। মুমূর্ষ কোন রোগীকে শহরে নিতে গেলেও রাস্তার ট্রাফিক জ্যামের কারণে সময় মতো পৌঁছাতে না পারায় পথ যাত্রাতেই রোগীকে চির বিদায় নিতে হয়।

বর্ষাকালে সাপের প্রাদুর্ভাব অনেক বেড়ে যায়। বন্যায় বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে যাওয়ার কারণে বিষধর সাপেরা শুকনো জায়গার খোঁজে বাড়ির আনাচে কানাচে চলে আসে এমনকি ঘরের ভিতরেও ঢুকে যায়। এর ফলে সাপের কামড়ের সংখ্যা বেড়ে যায়।

আমার অভিজ্ঞতায় বলি, গত বছর জুন/১৮ মাসের প্রথম দিন আমি বাসায় একাই ছিলাম। হঠাৎ পাশের ইউনিট এর একজন সাপ সাপ বলে চিৎকার করাতে দরজায় আসতেই সে বলল, আপনার রুমে সাপ ঢুকেছে। আমি নিজের চোখে দেখেছি। ভাগ্যিস সাপটা বিষধর ছিল না এবং আমার রুমে ঢোকার শুরুতেই লোকটা দেখেছিল। মানুষের চিৎকার শুনে ভয়ে দরজার সাথে জুতার রাখার সেল্ফের নিচে গুটিসুটি হয়ে বসে ছিলো। আমি সেদিন ভাগ্যক্রমে বেচে গিয়েছিলাম।

বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে সাপে কামড় এখন একটি মারাত্নক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর সাপের কামড়ে অজ্ঞতা ও হাতের কাছে চিকিৎসা না থাকায় মৃত্যুর হার বাড়ছে। এমতাবস্থায় সরকারী উদ্যোগে অ্যান্টি স্নেক ভেনম নামের ইনজেকশন ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সরবরাহ করতে হবে। তাহলে সাপে কাটা রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসবে।



0 Post a Comment: