ছোট
বেলায় আম কুড়ানোর কথা মনে পড়লে আজও সেই দিন গুলোতে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। জসীম উদ্দিনের
সেই কবিতা যেন সবার জীবনেই এসেছে। ”ঝড়ের দিনে মামার বাড়ি আম কুড়াতে সুখ“। ঋতু
বৈচিত্রের দেশ বাংলাদেশে। ফলে-ফুলে, ফসলে
সমৃদ্ধ এই দেশ। ঋতুভেদে একেক মৌসুমে একেক ফল পাওয়া যায় । গ্রীষ্মকালে সব রসালো ফল
পাওয়া যায় তাই গ্রীষ্মকালকে বলা হয় ফলের মাস। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস সর্বত্রই পাওয়া যায় এই সময়।
গ্রীষ্মকাল শুরু হলেই বিভিন্ন ফলের গদ্ধে মৌ মৌ করে চারদিক। এই ফলগুলো যেমন
সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। গ্রীষ্মকালীন এই ফলগুলোর মধ্যে আম অন্যতম। যাকে আমরা
ফলের রাজা হিসেবে সবাই জানি। আজ আলোচনা করব আমের পুষ্টিগুণ নিয়ে।
আম
গাছকে বাংলাদেশের জাতীয় গাছ বলা হয়। আম কাঁচা কি পাকা দু’ভাবেই খাওয়া যায়। কাঁচা
আম সবুজ রঙের আর পাকা আম হলুদ বা লালচে কমলা হয়। কাঁচা আম টক হয়ে থাকে আবার কিছু কাঁচা আম মিষ্টিও হয়।
পাকা আম খেতে মিষ্টি । বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের আমের ফলন হয়। বাংলাদেশে আমের ফলনের
উপর ভিত্তি করে রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ এগিয়ে। তাই রাজশাহীকে বলা হয় আমের
রাজধানী। পৃথিবীতে ৩৫ প্রজাতির আম আছে। আমের যেমন
বিভিন্ন জাত আছে তেমনি সুন্দর
সুন্দর নামও রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো ফজলি, ল্যাংড়া, গোলাপভোগ,আম্রপালি, মল্লিকা,
ত্রিফলা, অরুনা, সুবর্নরেখা, নিলাম্বরী, গোপাল-খাস, বারোমাসী, হাড়িভাঙ্গা,
তোতাপূরী, কলাবতী ইত্যাদি। নামের যেমন
বৈচিত্র স্বাদেও তেমনি।
আমের
উপকারিতা:
আমে বেটাক্যারোটিন, ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়াম থাকায় হার্টের সমস্যা প্রতিরোধে
সাহায্য করে।
আমে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ, যা চোখের দৃষ্টির জন্য বিশেষ উপকারি।
আমে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বিভিন্ন রকম ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এতে প্রচুর
পরিমাণে খনিজ লবন রয়েছে যা আমাদের দাঁত, নখ, চুল মজবুত করতে সহায়তা করে। কাঁচা আম আয়রণে
ভরপুর তাই কাঁচা আম খেলে রক্তস্বল্পতা সম্স্যা দূর করে রক্ত পরিষ্কার রাখে। যাদের ওজন
বৃদ্ধি নিয়ে সমস্যা তাদের জন্য আম বিশেষ উপকারি। প্রতিদিন আম খেলে দেহের ক্ষয়রোধ হয়
ও স্থুলতা কমাতে সাহায্য করে। আমে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন -সি, তবে কাঁচা আমে বেশি।
আমে আছে ভিটামিন- বি কমপ্লেক্স যা স্নায়ুতে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়ে শরীর রাখে
সতেজ। যা ভালো ঘুমের সাহায্যকারী।
আমে আছে প্রচুর
পরিমাণে ফাইবার। এই ফাইবার পরিপাক ক্রিয়াকে উন্নত করে অতিরিক্ত ভূড়ি বৃদ্ধিতে প্রতিরোধকের
ভূমিকা পালন করে। আমের পুষ্টি উপাদান চুলের জন্য বিশেষ উপকারি। চুলের বৃদ্ধির জন্য
কাজ করে সাথে চুলপড়া রোধ ও খুশকী দূর করতে সহায়তা করে।
বিভিন্ন খাবার তৈরীতে আমের ব্যবহার:
বিভিন্ন খাবার তৈরীতে আমের ব্যবহার:
ফল হিসেবে আম খাওয়া ছাড়াও বিভিন্ন খাবার তৈরীতে আমের ব্যবহার দেখা যায়।
যেমন- আমের জুস, আমের আচার, আমের জেলি, আমের পায়েস, আমের পিঠা, আম সত্ব, আমের আইসক্রিম,
পাকা আমের সরবত, কাঁচা আমের সরবত, কাঁচা আমের ভর্তা, আমের সালাদ, আম দিয়ে ছোট মাছের
চর্চরি, আম দিয়ে ডাল, আমির লস্যি, আমের কেক, আমের রাবড়ি, আমের দই আরো অনেক ধরণের খাবার
তৈরী করা যায়।
রূপচর্চায় আম:
ফল খেলে মানুষকে এমনিতেই অনেক সুন্দর দেখায় তারপর যখন এই ফল দিয়ে সেই
মানুষ রুপ চর্চা করে তাহলে তাকে আরো সুন্দর দেখাবে। বর্তমানে এই আম দিয়ে রুপচর্চাও
করা হচ্ছে। আমের তৈরী বিভিন্ন ধরণের ফেস প্যাক, চুলের প্যাক তৈরী হচ্ছে । আম শুধু ফল
বা খাবার নয়। এই ফল আমাদের দেহের জন্য অনেক উপকারী। তাই এই ফল বেশি বেশি খাওয়া উচিত।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া
0 Post a Comment:
Post a Comment