ভিমরুলি বাজারটা সব থেকে
বেশি জমজমাট থাকে বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পযর্ন্ত। এসময় ভীমরুলির আশে পাশে
গ্রামের চাষিরা বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে বাজারে চলে
আসে। আপনি যদি ঝালকাঠি জেলা সদর থেকে মোটরবাইকে আসতে চান তাহলে সময় লাগবে আধাঘন্টা
আর ইঞ্জিন চালিত নৌকায় আসলে সময় লাগবে এক ঘন্টার মতো।
ভাসমান পেয়ারা বাজার Photo Credit Rafi |
প্রতিদিন কয়েক হাজার মণ পেয়েরা কেনাবেচা হয় এই অঞ্চলের বাজার
গুলোতে। বিভিন্ন দূর দূরান্ত হতে পাইকাররা আসে এখান থেকে পেয়েরা কিনতে। চাষিদের কাছ
থেকে সরাসরি পেয়ার কিনে নিয়ে তারা নদীপথে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বড় ইঞ্জিন চালিত
নৌকা যোগে চলে যায়। এখানকার বাজার গুলোর মধ্যে ভিমরুলি বাজারের সৌন্দর্য ভিন্ন।
তিন দিক থেকে তিনটি খাল এসে মিশেছে এখানে। তিন খালের মোহনা হওয়ায় এটি অনেক প্রশস্ত
তাই চাষিরা এখানে আসতে পছন্দ করেন।
ভাসমান পেয়ারা বাজার Photo Credit Rafi |
পেয়েরার মৌসুম শেষ হলেই আবার শুরু হয় আমড়ার মৌসুম। এ অঞ্চলে আমড়ার
ফলনও খুব ভালো। তারপরেই আসে সুপারি মৌসুম। পেয়েরা বেচাকেনার মতো খুব ব্যস্ত না
থাকলেও বছরের প্রায় সময়ই ব্যস্ত থাকে এখানকার ভাসমান হাট বাজার গুলো। কারণ ফল
ছাড়াও বিভিন্ন রকমের সবজির হাটও খুব জমে উঠে সর্বত্র। এই ভাসমান বাজার দেখতে
বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক পর্যটক ছুটে
আসেন।
ভাসমান পেয়ারা বাজার Photo Credit Rafi |
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক এবং নৌ এই দুই পথেই আসতে পারেন। গাবতলী হতে একটি এসি
বাস আছে ভাড়া নিবে আটশত টাকা। নন এসি গুলোর মধ্যে দ্রুতি, ঈগল, সুরভী অন্যতম। ভাড়া
নিবে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। এছাড়া সায়দাবাদ থেকেও ঝালকাঠি যাওয়ার একটি বাস আছে। আপনি
চাইলে সেখান থেকেও যেতে পারেন। তবে বরিশাল ঝালকাঠি যাওয়ার জন্য নদীপথে গেলেই
সবচেয়ে ভালো মনে করি। নদী দেখতে দেখতে কখন সেখানে পৌঁছে যাবেন বুঝতেই পারবেন না। ঢাকার
সদরঘাট থেকে প্রতিদিন পিরোজপুর, বরিশালের পথে লঞ্চ ছাড়ে বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা
৭টা পর্যন্ত। এমভি টিপু এবং এমভি
সুন্দরবন-২ লঞ্চ। ভাড়া ডাবল কেবিন আঠারশ এবং সিঙ্গেল কেবিন এক হাজার টাকা মাত্র।
ডেকে জন প্রতি ২০০ থেকে ২৫০
টাকা।
ভ্রমণ পরিকল্পনা
লঞ্চ থেকে নেমে সকালের নাস্তা সেড়ে নিতে পারেন সেখানকার ছোট হোটেল
গুলোতে। তারপর ১০ জনের ধারণক্ষমতা উপযোগী একটি নৌকা ভাড়া করে সারাদিন ঘুরে বেড়াতে
পারেন। ভাড়া দরদাম করে ১,৫০০/- থেকে ২,০০০/- টাকা। আর মটর
সাইকেলে করেও ঘুরতে পারেন। তবে নৌকাযোগে ভ্রমণ অন্যরকম একটি আনন্দ দিবে।
কোথায় থাকবেন
সারাদিন ঘুরাঘুরি শেষ করে আপনি চাইলে সন্ধ্যায় লঞ্চ ধরে ফিরে আসতে
পারেন। আর যদি থাকতে চান তাহলে সেখানকার সাধারণ মানের হোটেল গুলোতে থাকতে পারেন।
হোটেল গুলো হলো ধানসিড়ি রেস্ট হাউস, আরাফাত বোডিং, হালিমা বোর্ডিং অন্যতম।
নামমাত্র মূল্যে ১০০/- টাকা থেকে ২৫০/- টাকার মধ্যে এখানে থাকার ব্যবস্থা আছে।
নদীর পাড় ঘেষে হোটেল গুলো থাকার অভিজ্ঞতাও অন্যরকম। তবে ভালো মানের হোটেলে থাকতে
চাইলে আপনাকে যেতে হবে ঝালকাঠি হতে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে বরিশাল সদরে।
দর্শণীয় স্থান দেখা
কোথাও ঘুরতে গেলে দর্শনীয় স্থান গুলো ঘুরে আসতে পারলে ভ্রমণ আরও
সার্থক হবে। ভাসমান পেয়ারা বাজার দেখা শেষ করে আশে পাশের ঐতিহ্যবাহী স্থান যেমন
গুঠিয়া মসজিদ, দূর্গাসাগর দিঘি দেখে রাতের লঞ্চে আবার ফিরে আসা।
টিপস্ বা পরামর্শ
যেহেতু জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত পেয়ারার মৌসুম। তাই তখন
সেখানে ঘুরতে যাওয়ায় উত্তম। এই তিন মাসে বৃষ্টি অনেক হয় তাই সাথে করে রেইন কোট ও
ছাতা নিতে ভুলবেন না। পরিবেশের কথা চিন্তা করে প্লাস্টিক জাতীয় কোন কিছু পানিতে না
ফেলাই ভালো। বাগানে ঘুরার সময় অনুমতি ছাড়া পেয়েরা না ছেড়া।
0 Post a Comment:
Post a Comment