বাংলাদেশের একমাত্র জলাবন (সোয়াম্প ফরেষ্ট) রাতারগুল। সিলেট জেলা
সদর থেকে মাত্র ২৬ কিলোমিটার দূরত্বে এর অবস্থান। সিলেট জেলার গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর
ইউনিয়নে সবুজে অরণ্য রাতাগুলের অবস্থান। উইকিপিডিয়ার সূত্রমতে, পৃথিবীতে স্বাদুপানির
জলাবন আছে মাত্র ২২টি। এর মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশে আছে মাত্র দুটি। রাতারগুল তার মধ্যে
একটি আর অপরটি শ্রীলংকায় অবস্থিত। অনেকে রাতারগুলকে বিশ্ববিখ্যাত আমাজনের সাথে
তুলনা করে। আবার অনেকে সুন্দরবনের সাথেও তুলনা করে থাকে। আমাজনের মতো বছরের বেশির
ভাগ সময় জলমগ্ন থাকে এই রাতারগুল। তবে মে থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বেশি পানি থাকে এই এলাকায়।
বর্ষায় অথই জলে ভরে যায় পুরো বন। আর তখনই পর্যটকেরা রাতারগুল ভ্রমণে আসতে থাকে। ছোট
ছোট নৌকা নিয়ে ৫-৬ জনের দল নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর মজাই যেন আলাদা। তবে খুব সাবধান থাকতে
হবে। বিষাক্ত সাপ আর অন্যান্য সরীসৃপ প্রানীরা তখন সব গাছের উপরে আশ্রয় নেয়। বন বিভাগের তথ্যমতে, রাতারগুল বনটি ৩০,৩২৫ একর
জায়গা জুড়ে এর অবস্থান। এর মধ্যে ৫০৪ একর
জায়গা জুড়ে আছে বন আর বাকী পুরো এলাকা ছোট বড় অনেক জলাশয়ে পূর্ণ। ১৯৭৩ সালে সরকার
রাতারগুলকে বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। শীতকালে অতিথির পাখির
বিচরণে মুখরিত থাকে পুরো রাতারগুল বন।
রাতারগুল একটি প্রাকৃতিক বন। এখানে কদম, জালিবেত ও অর্জুন সহ প্রায়
২৫ প্রজাতির গাছ চোখে পড়বে। এছাড়াও বন বিভাগ বেত, কদম, হিজল সহ বিভিন্ন প্রজাতির
গাছ রোপন করে বনকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
রাতের বেলা রাতারগুলো দৃশ্য অন্যরকম থাকে। ছোট ছোট নৌকা করে কুপি
বাতি জ্বালিয়ে জেলেদের মাছ শিকার করতে দেখা যায়। তখন অন্যরকম একটি দৃশ্য ধারণ করে
রাতাগুল বন। টেংরা, পাবদা, খলিশা, মায়া,কালবাউস, রুই, মাগুর ও সিং সহ বিভিন্ন
জাতের মাছ পাওয়া যায় এই বনে।
রাতারগুলে ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে ভিতরে ঢোকার সাথে সাথে মুগ্ধতায় ভরে
যাবে আপনার মন। গোয়াইন নদীর বয়ে যাওয়া পানির শব্দ, পাখিদের কলতান, সেই সাথে ভারতের
মিজোরামের উচু সবুজ পাহাড়ের দৃশ্য গুলো আপনার রাতারগুল ঘুরতে যাওয়ার মিশনটাকে পূর্ণতায়
ভরিয়ে তুলবে।
ভ্রমন প্রস্তুতি ও সতর্কতাঃ
যেহেতু মে থেকে সেপ্টেম্বর মাসে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হয় তাই ভ্রমণের
সঙ্গী হিসেবে ছাতা, রেইনকোট নিতে ভুলবেন না। যারা রোদ টুপি পড়ে অভ্যস্ত তারা সঙ্গে
করে রোদ টুপি নিতে পারেন। সাঁতার না জানলে নৌকায় উঠার আগেই লাইফ জ্যাকেট পড়ে
নিবেন। সঙ্গে খাবার পানি এবং শুকনো খাবার নিলে ভালো। কারণ রাতারগুলের আশে পাশে
খাবার হোটেল বা থাকার ব্যবস্থা নেই।
পরিবেশের কথা মাথায় রেখে কোন ধরণের পানির বোতল বা প্লাস্টিক জাতীয় কোন কিছু পানিতে
না ফেলায় ভালো। নিরাপদ ও শুভ যাত্রা কামনা সবার জন্য।
কি ভাবে যাবেন রাতারগুল
ঢাকা➩ সিলেট
ঢাকা
থেকে সিলেট বাস/ট্রেন/বিমান তিন পথেই আসা যায়। ঢাকা থেকে সিলেট বিভিন্ন ধরনের বাস পাবেন
এসি/ননএসি শ্যমলি, হানিফ, গ্রীন লাইন, এস আলম,
এনা, ইউনিক ইত্যাদি।
ঢাকা
থেকে সিলেট বাস ভাড়া ৪০০-৫০০ টাকা (নন এসি) ৮০০-১২০০ টাকা (এসি) । ট্রেন ভাড়া ২৮০ থেকে
১২০০ টাকা (শ্রেণি ভেদে) সময় লাগবে ৭-৮ ঘন্টা।
সিলেট ➩রাতারগুল
সিলেট
থকে রাতারগুল সিলেটে-জাফলং রোড থেকে বাস বা ভাড়া গাড়িতে করে যাবেন সারিঘাট। সারি ঘাট
থেকে টেম্পোতে করে গোয়াইনঘাট বাজার। এখান থেকে নদী পথে রাতারগুল, নৌকা রিজার্ভ করতে
হবে। মনে রাখতে হবে বড় নৌকায় রাতারগুল পর্যন্ত যাওয়া যাবেনা। রাতারগুল বনে ঢুকতে হলে
ডিঙি নৌকায় যেতে হবে। গোয়াইনবাজার যাওয়ার পর সমস্যা হবে না স্থানীয় লোকেরাই বলে দিবে।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোর, সিলেট বিমান ভাড়া
ঢাকা
থেকে চট্টগ্রাম ৫৮০০৳
ঢাকা
থেকে কক্সবাজার ৬৬০০৳
ঢাকা
থেকে যশোর ৪০০০৳
ঢাকা
থেকে সিলেট ৪২০০৳
পূর্ব প্রস্তুতি, ভাল পরিকল্পনা থাকলে
কম সময়ে কম খরচে আপনার ভ্রমণ হবে নিরাপদ এবং আনন্দের।
0 Post a Comment:
Post a Comment