সাপ্তাহিক ছুটিতে পরিবার পরিজন ও বন্ধবান্ধব নিয়ে ঢাকার আশে পাশে গড়ে উঠা ঐতিহাসিক
ও দর্শনীয় স্থান গুলো ঘুরে আসতে পারেন। অনেকে মনে করেন ঘুরতে বের হলে টাকা খরচ হয় অনেক।
কিন্তু আমি বলবো ভালো জায়গায় ঘুরতে গেলে আপনার খরচের চেয়ে লাভের পরিমানই বেশি হবে।
ঘুরতে গেলে যেমন আপনার প্রতিদিনের একঘেয়েমি দূর হবে তেমনি নতুন জায়গা বা পুরাতন জিনিস
নতুন করে দেখলেও খারাপ লাগবে না। ঢাকার কাছাকাছি জায়গা গুলোর মধ্যে ঐতিহাসিক কিছু দেখতে
চাইলে নারায়ণঞ্জের সোনারগাঁও যেতে পারেন। এখানকার যে কয়েকটি দর্শনীয় স্থান আছে সেগুলো
আপনার ও আপনার পরিজন বন্ধু-বান্ধবদের মন ভরিয়ে তোলবে। আর এগুলো হলো পানাম নগরী,
সোনারগাঁও জাদুঘর (বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন) এবং বাংলার তাজমহল ।
Lipa and St. Martha's School Group |
পানাম নগর:
ঈসা খাঁর আমলে বাংলার রাজধানী পানাম নগর। ঢাকা শহর থেকে পানাম নগরের দূরত্ব
২৪ কিলোমিটার এবং সোনাগাঁও লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন জাদুঘর থেকে আধা কিলোমিটার উত্তরে
অবস্থিত। নগরের বুক চিড়ে চলে গেছে পানাম সড়ক। সড়কের দু’পাশে সারি সারি একতলা, দ্বিতল
ও তিনতলা অট্টালিকাগুলোই পানাম নগরে আসল সৌন্দর্য। এই এলাকাটি ১৯শ শতকে হিন্দু উচ্চবিত্ত
ব্যবসায়ীদের বাসস্থান ছিল। এখানে বাস করতেন কাপড় ব্যবসায়ীরা। এখানকার পুরানো সুদৃশ
অট্টালিকাগুলো ১৯শ শতকের ঐতিহাসিক স্মৃতি ধারণ করছে। পানাম নগরে টিকে থাকা বাড়িগুলোর
মধ্যে ৫২ টি বাড়ি উল্লেখযোগ্য। পানাম নগরে উত্তর পাশে ৩১টি দক্ষিন পাশে ২১টি বাড়ি রয়েছে। পানাম নগরের পাশ ঘেষে পঙ্খীরাজ
খাল বয়ে গেছে। শের শাহ আমলে নির্মিত কিছু নিদর্শন আজও মানুষের চোখকে বিমোহিত করে। পানাম
নগর এমন একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন যা দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক পর্যটক
ছুটে আসেন।
সাপ্তাহিক ছুটিঃ বুধ ও বৃহস্পতিবার
প্রবেশ মূল্যঃ পানাম নগরে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা মাত্র।
Lipa and St. Martha's School Group |
সোনারগাঁ জাদুঘর
সোনারগাঁও বা সুবর্ণগ্রাম দেড়শ বছরের
প্রাচীন ইতিহাস সমৃদ্ধ পুরানো ধ্বংসাবশেষ নগরী। ঢাকা শহর থেকে মাত্র ২৪ কিলোমিটার দক্ষিন-পূর্বে
এর অবস্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বেষ্টিত সোনারগাঁও বাংলার প্রাচীন রাজধানী নামেও পরিচিত।
সোনারগাঁও তৎকালীন সময়ে শিক্ষা-দীক্ষায়, কৃষি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিল্প ও কারুকার্যে
বিশ্ববিখ্যাত ছিলো। সোনারগাঁও এর মসলিন কাপড় ছিল সারা বিশ্বে সমাদৃত। কথিত আছে যে,
বাংলার প্রথম মসজিদ সোনারগাঁওয়ের গোয়ালদী গ্রামে নির্মিত হয়। পৃথিবীর দীর্ঘতম সড়ক গ্র্যান্ড
ট্রাঙ্ক রোড সোনারগাঁও হতে পাঞ্জাব পর্যন্ত শের শাহের আমলে নির্মিত হয়। সোনারগাঁওয়ে
রয়েছে গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ এর মাজার, রয়েছে পাঁচ পীরের দরগাহ সহ অসংখ্য গুনীজনের স্মৃতি।
জাদুঘরে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা এবং বিদেশী পর্যটকদের
জন্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
Lipa Hajong |
বাংলার তাজমহল
যারা ভারতের আগ্রায় গিয়ে সম্রাট শাহজাহনের স্ত্রীর প্রতি বিস্ময়কর ভালোবাসার
নিদর্শন তাজমহল দেখেননি তারা যদি এর প্রতিকৃতি দেখতে চান তাহলে তারা ঘুরে আসতে পারেন
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও জামপুর ইউনিয়নের পেরাব গ্রামে ১৮ বিঘা জমির ওপর নির্মিত বাংলার
তাজমহল। ২০০৮ সালে উদ্বোধনের মাধ্যমে জনসাধারণের জন্য এটি দেখার সুযোগ করে দেওয়া হয়।
এছাড়াও আশে পাশে মনোরম পরিবেশে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ
মদনপুর বস্তল এশিয়ান হাইওয়ে থেকে রিক্সা, অটো বা সিএনজিতে সময় লাগবে মাত্র ১০ থেকে
১৫ মিনিট।
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে সোনারগাঁও যাওয়া খুব সহজ। ঢাকা গুলিস্থান এর স্টেডিয়াম মার্কেটের
সামনে থেকে বেশ কয়েকটি বাস ছাড়ে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে। এদের মধ্যে বোরাক ও দোয়েল
অন্যতম। ভাড়া নিবে ৪৫ থেকে ৬০ টাকা। সময় লাগবে এক থেকে দেড় ঘন্টা। সোনারগাঁও এর মোগড়া
পাড়া স্টেশনে নেমে রিক্সা, অটো বা সিএনজি করে জাদুঘরের গেট পযর্ন্ত যাওযা যাবে। ভাড়া
নিবে ২০ থেকে ৩০ টাকা মাত্র।
Photo Click By Lipa Hajong |
0 Post a Comment:
Post a Comment