Biloy Mrong

Biloy Mrong

Saturday, July 21, 2018

কুয়াকাটা ভ্রমণ ও ট্যুর প্ল্যান/ Kuwakata Travel

কুয়াকাটা ভ্রমণ ও ট্যুর প্ল্যান

কুয়াকাট সমুদ্র সৈকত


সমুদ্র দেখলেই মনে হয় যদি এই সমুদ্রের মতো বিশালে হৃদয়ের মানুষ হতে পারতাম। এই রকম আপসোস অনেকেই করে থাকে। বাংলাদেশে প্রধান যে দুটি সমূদ্র সৈকত আছে তার মধ্যে কক্সবাজারের পরেই কুয়াকাটার অবস্থান। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত। কুয়াকাটা এমন একটি সমুদ্র সৈকত যেখানে দাঁড়িয়ে আপনি সূর্যদয় ও সূর্যাস্ত দুটিই দেখতে পাবেন। মনে হবে সমুদ্রের বুক ছিড়ে উদিত হচ্ছে আবার এই বুকের মধেই আবার নিজেকে লুকিয়ে নিচ্ছে। সাগর পাড়ের সূর্যদয় দেখা অন্য রকম মজা দিবে। তার জন্য আপনাকে কষ্ট করে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে। ঘুম থেকে উঠেই আপনাকে কাউয়ার চর নামক স্থানে যেতে হবে। সেখানে আপনি মটরবাইকে বা ভ্যানে করেও যেতে পারবেন। ভ্যানে যেতে ১০ মিনিটের মতো সময় লাগবে। সূর্যদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য যে একবার দেখবে তাকে কুয়াকাটায় বার বার টেনে নিয়ে যাবে। অপরূপ সুন্দর একটি দৃশ্য যা না দেখলে কারোর বর্ণনাতে আপনার মন ভরাতে পারবেনা।


কুয়াকাট সমুদ্র সৈকত


সূর্যদয় দেখা শেষ হয়ে গেলে মন প্রাণ ভরে সমুদ্রের জলে নেমে স্নান করে নিতে পারেন। বিভিন্ন জায়গার মতো এখানে চোরাবালির ভয় খুবই কম। কাউয়ার চরের সমুদ্র পাড়ের লাল কাকড়া গুলোর এদিক সেদিক ছুটাছুটির দৃশ্য গুলো আপনাকে অন্য রকম একটি মজা দিবে। সময় করে পাশের জেলে পল্লীতেও ঘুরে আসতে পারেন। সেখানে বিভিন্ন রকমের শুটকি দেখতে পাবেন। বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছের শুটকি আপনি এখানে তুলনামূলক কম দামে পাবেন। এখানকার শুটকি দেশের বাইরেও রপ্তানি করা হয়।

সৈকতে ঘুরতে আসা দর্শনাথীদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য এখানে মটরসাইকেল বা ঘোড়ার ব্যবস্থা আছে। সময় অনুসারে দর দাম করে ভাড়া নিতে পারেন। সমুদ্র উপকূলে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ট্রলার এবং স্পিড বোট কিংবা ইঞ্জিন চালিত বড় নৌকা পাবেন। সেগুলোর মাধ্যমে আপনি সৈকতের আশে পাশের অপূর্ব দৃশ্য সমূহ অবলোকন করে চোখে দেখার দৃষ্টিকে পরিতৃপ্ত করে তোলতে পারবেন। খুলনা সাতক্ষীরার মতো না হলেও কুয়াকাটার সুন্দরবনের দৃশ্য গুলোও আপনার মনকে এক নতুন আনন্দ দিবে।

কুয়াকাটায় ঘুরতে গেলে সেখানকার আদিবাসি রাখাইন পল্লী ঘুরে আাসতে ভুলবেন না। তাদের সাধারণ জীবন যাপন এবং পুরানো স্থাপত্য নিদর্শন দেখে আপনাকে মুগ্ধ করবে। দেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মন্দিরটি এই রাখাইন পল্লীতে অবস্থিত। গৌতম বুদ্ধের ধ্যানমগ্ন বিশাল আকৃতির মূর্তি ( যার উচ্চতা ৩৬ ফুট ) দেখতে পাবেন। মন্দির এর ভিতরের ভাব গম্ভীর পরিবেশ দেখে মনে হবে আপনি থাইল্যান্ড বা কোন বৌদ্ধ ধর্মালম্বী দেশে এসেছেন। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র ১০ কিঃলিঃ দূরে এর অবস্থান। অটো, ভ্যান বা রিক্সা করে সেখানে যেতে পারবেন।

কিভাবে যাবেন ঃ
কুয়াকাটায় সড়ক এবং নদী পথ দুই পথেই যাওয়া যাবে। গাবতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে এসি ও ননএসি দুই রকমের বাস পাবেন। নন এসি ভাড়া নিবে ৫০০-৫৫০ টাকা। এসি ৭০০ টাকার মতো। সময় লাগবে ১১-১২ ঘন্টা। তবে বরিশাল বা কুয়াকাটা যাওয়ার জন্য নদী পথেই যাওয়াটা একটি অন্য রকম রোমাঞ্চ মনে হবে। কারণ ‍ বাংলাদেশের অন্য জেলা গুলোতে আমরা সড়ক পথেই গিয়ে থাকি। তাই কুয়াকাটায় নদী পথে যেতে হলে যাওয়ার একদিন আগে সদরঘাট থেকে টিকিট কেটে নিতে পারেন। প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে লঞ্চ ছেড়ে যায় কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে। কেবিন ভাড়া নিবে ৯০০-১১০০ টাকা। ডাবল কেবিন ১৮০০-২০০০ টাকা। ডেকের ভাড়া সময় বুঝে ১৮০-২০০ টাকা। ভ্রমণে ১০-১৫ জনের বা তার উর্ধ্বে হলে ডেকে অনেক মজা করে যাওয়া যায়। পটুয়াখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে সকাল ৬টা থেকে প্রতি ঘন্টায় ছেড়ে যায় কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে। লঞ্চঘাট থেকে বাস স্ট্যান্ড এর ভাড়া ২৫-৩০ টাকা। সেখান থেকে জন প্রতি ১০০ টাকা কুয়াকাটা পর্যন্ত।

কুয়াকাটায় থাকার জন্য ভালো মানের অনেক হোটেল মোটেল রয়েছে। এছাড়া দুটি ডাক বাংলো এবং সাগর কন্যা পর্যটন হলিডে হোমস আছে। সেই সাথে কিছু গেস্ট হাউস আছে। যেগুলোতে আপনি মান বুঝে ৩০০ টাকা ২০০০ টাকার মধ্যেই থাকার সুব্যবস্থা করে নিতে পারবেন।

হোটেলের আশে পাশেই ঘরোয়া পরিবেশে তৈরী বেশ কয়েকটি খাবার দোকান আছে। খুব কম খরচে আপনি সেগুলোতে তৃপ্তিভরে খেতে পারবেন। তবে অবশ্যই অর্ডার করার করার আগে দাম জেনে নিবেন।

সাগর কন্যা কুয়াকাটা
সাগর কন্যা কুয়াকাটা








0 Post a Comment: