ছুটির দিনে
কোথায় ঘুরতে যাবো এই নিয়ে আমরা অনেক চিন্তায় থাকি। ঢাকায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঘুরে
দেখার মতো অনেক কিছু আছে যেখান থেকে আপনি বিনোদন ও শিক্ষা দুটিই পেতে পারেন। আজ এমনই
একটি জায়গার নাম বলবো যেখানে গেলে আপনি প্রায় ৮০০ বিরল প্রজাতির প্রায় ১৮,০০০ উদ্ভিদ দেখে
আসতে পারবেন। এই বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ বাগানটির নাম হলো বলধা গার্ডেন। ঢাকার নারিন্দার
কাছে ওয়ারী এলাকায় এটির অবস্থান। যদি উদ্ভিদ বা ঐতিহাসিক সম্পর্কে কিছু
শিখতে চান তাহলে এই উদ্ভিদ উদ্যান ঘুরে আসতে পারেন।
বলধা গার্ডেনের পুকুর |
নির্মাণ ও নামকরণঃ
তদানীন্তন ভাওয়াল
জমিদার নরেন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরী ১৯০৯ সালে বাগানটি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে এটা জমিদার
বাগান বাড়ি নামে পরিচিত ছিলো। ঢাকার উচ্চবিত্তরা এখানে বিনোদনের জন্য আসতো। বলধা জমিদার
এখানে দুটি উদ্যান তৈরি করেছিলেন। বৃহত্তর
সিবিলি ও ক্ষদ্রতর সাইকি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে নানা প্রজাতির গাছ , ঔষধি গাছ ও
ফুল এনে এই উদ্ভিদ উদ্যানটি সমৃদ্ধ করতে থাকেন জমিদার নরেন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরী।
৩.৩৮ একর জায়গার উপর এই উদ্ভিদ উদ্যানটি অবস্থিত। জমিদারের মৃত্যুর পর এক সময় সাইকী
ও সিবিলি এ দুটি উদ্যানকে এক সাথে বলধা গার্ডেন নামকরণ করা হয়। অনেকের ধারণা বলধা নাম
থেকেই বলধা গার্ডেনের নামকরণ করা হয়েছে। জমিদার এখানে এইটি পারিবারিক জাদুঘরও প্রতিষ্ঠা
করেছিলেন।
উদ্ভিদ ও ফুলের জাদুঘরঃ
পৃথিবীর দেশ
থেকে এনে রোপন করা উদ্ভিদের সম্ভার বলধা গার্ডেন উদ্ভিদ ও ফুলের জাদুঘর নামে খ্যাত।
গার্ডেনে প্রধানত বিভিন্ন ধরনের অর্কিড, ক্যাকটাস, গ্রীনহাউসের গাছপালা, জলজ উদ্ভিদ,
গোলাপ, শিলালগ্ন প্রজাতি ও দেয়ালের লতা, বৃক্ষশালা ও বিবিধ গাছগাছালি রয়েছে। সব মিলিয়ে
এখনে ৮০০ প্রজাতির প্রায় ১৮,০০০ উদ্ভিদ আছে। এখানকার প্রায় সব গুলি উদ্ভিদই বিদেশ থেকে
আনা এবং খুবই দুষ্প্রাপ্য। দেশ বিদেশের অনেক খ্যাতিমান লোকেরা বলধা গার্ডেন দেখতে আসতেন।
কবি রবীন্দ্রনাথ বাগানটি দেখতে এসে জাপান থেকে সংগ্রহ করে আনা “ক্যামেলিয়া ” ফুলের
সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাঁর বিখ্যাত “ক্যামেলিয়া” কবিতাটি রচনা করেছিলেন। বাগানের দেখার
মতো উদ্ভিদ হচ্ছে “সেঞ্চুরি প্ল্যান্ট” এটি শতবর্ষে মাত্র একবার ফুটে। মিশরের ফারাওদের
মমি করে রাখার জন্য যে উদ্ভিদ ব্যবহার করা হতো সেই ঐতিহাসিক “বাওবাব” গাছটিও এখানে আছে। এটি উপমহাদেশের মধ্যে এমন একটি
ঐতিহাসিক উদ্ভিদ উদ্যান যা দর্শনাথীদের জন্য খুবই
আকর্ষণীয় স্থান ।
ব্যবস্থাপনাঃ
জমিদার নারায়ন চৌধুরীর মৃত্যুর পর প্রথমে কলকাতার
হাইকোর্টের নিয়ন্ত্রণ ট্রাস্টের অধীনে ছিলো। ১৯৫১ সালে পাকিস্তান সরকারের আমলে একটি
দল এর ব্যবস্থাপনায় ছিলো। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সরকার গার্ডেনের ঐতিহ্য ধরে
রাখার জন্য গার্ডেনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বন বিভাগকে দেওয়া হয়। বর্তমানে বলধা গার্ডেন
জাতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন এর একটি অংশ।
প্রবেশ মূল্যঃ জনসাধারন ১০ টাকা, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের
জন্য ০৫ টাকা।
খোলার সময়/সময়সূচিঃ
সপ্তাহের প্রতিদিনই
সকাল ০৮ টা থেকে বিকাল ০৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। দুপুর
১২ টা থেকে ০২ টা মধ্যাহ্ন বিরতি।
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকার সব জায়গা
থেকেই গুলিস্থান আসার মতো অনেক বাস আছে। গুলিস্থানের ফ্লাই ওভার ব্রীজের নিচে থেকে
রিক্সা নিয়ে সরাসরি ওয়ারি বলধা গার্ডেনে চলে আসতে পারবেন। আবার মতিঝিল দিয়ে আসলে রিক্সা
নিয়ে টিকাতলী মোড় হয়ে রাজধানী সুপার মার্কেটের সামনে দিয়ে খুব সহজে চলে আসতে পারবেন।
গুলিস্থান ও মতিঝিল থেকে রিক্সা ভাড়া দরদাম করে উঠলে ৩০-৪০ টাকা নিবে।
আপনার ছুটির দিনের যাত্রা শুভ ও আনন্দের
হোক।
1 Post a Comment:
I think its very nice place
Post a Comment